হঠাৎ একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন মাথায় বা শরীরের অন্য কোন অংশে গোল করে পয়সার মত একটু জায়গা থেকে চুল বা লোম নেই। ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করার জনপ্রিয় মিথ হল- এই চুল বা লোম রাতে কোন পোকা খেয়ে ফেলেছে,বিশেষত তেলাপোকা(!) আর সাথে সাথে আপনি তেলাপোকা নিধনে লেগে যেতে পারেন কিন্তু আসলে আপনি একটা ভুল বিশ্বাস নিয়ে থেকে গেলেন। কয়েকদিন পর আবার যখন আরেক জায়গার চুল বা লোম ঝরে পড়বে তখন রাতের ঘুম মাথায় উঠবে। আসলে এটা একটা অটো-ইমিউন ডিজিজ, যার নাম ‘এলোপেসিয়া এরিয়াটা’।
এলোপেসিয়া এরিয়াটা রোগটি স্থানীয় ভাষায় টাক সমস্যা হিসাবেও পরিচিত।দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কখনও কখনও রোগ-ব্যধির সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে সেম সাইড আক্রমন করে ফেলে- যেকোন যুদ্ধে এটা একটা কমন ব্যাপার, দেহকে দোষ দিয়ে লাভ নেই, তো এরকম আক্রমন করতে গিয়ে কখনো নিজের ত্বক কোষ নিজেকেই চিনতে না পারার কারণে নিজের কলাকোষকে ধ্বংস করে থাকে। এখানে এটি একটি আক্রমনকারী হিসাবে কাজ করে। তখনই এরকম জায়গায় জায়গায় চুল বা লোম ঝড়ে পড়ে। এই রোগে শরীরের একটি অংশে অথবা সকল এলাকা জুড়ে চুল পড়া সমস্যটি ঘটে। ১ থেকে ২ শতাংশ ক্ষেত্রে, সমগ্র মাথা জুড়ে এ সমস্য ছড়িয়ে পরতে পারে বা বহি:ত্বকের সমগ্র অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এটা মোটেও কোন ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ নয়। কোন ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসও এর নেপথ্যে নেই।এই রোগটি সাধারনত পরিবারের অন্য সদস্যদের ভেতর থাকলে পরবর্তিতে সন্তানসন্ততিদের ভেতর দেখা যায়, যা পারিবারিক ঐতিহ্যের ফলে হয়। পরিবারের দুই বা ততোধিক সদ্যসদের নিয়ে গবেষনায় দেখা যায় যে, এই রোগটির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় মূলত পরিবারের অন্য সদস্যরা এটি দ্বারা কখনো আক্রান্ত হয়ে থাকলে। গবেষনায় আরও জানা যায় যে, এই রোগটি সাধারনত চার পুরুষ পর্যন্ত সঞ্চিত থাকে, যাদের ভেতর এটি হতে পারে। এছাড়া, এই রোগটি সংগঠিত হতে পারে যাদের ভেতের সয়ংক্রিয় রোগ সমূহ সংগঠনের মত জেনেটিকাল সম্বন্ধ রয়েছে। স্ট্রেস থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের কিছু পরিবর্তন হয়, সেটা অনেক সময়ে অটো-ইমিউন রোগকে প্রভাবিত করে। তবে মানসিক চাপের পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাস এবং দূষণের মাত্রাও এই রোগ বাড়ার পিছনে উল্লেখযোগ্য কারণ।
আরও যেসব কারনে এটি হতে পারে তা হল-
– কোন ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
– দীর্ঘ মেয়াদী অসুস্থতা
– রাসায়নিক এক্সপোজার
– পুষ্টির ঘাটতি
– থাইরয়েড জটিলতা
– ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
– গর্ভাবস্থা
এটা নিয়ে খুব বেশি দু:শ্চিন্তার কারন নেই।এটি যদি অনেক বেশি জায়গা জুড়ে না হয়, তাহলে সাধারণত এমনিতেই কিছুদিন পর সেখানে সেরে যায় বা চুল গজায়। বেশি মাত্রায় হতে থাকলে বা দীর্ঘদিনেও না সারলে স্কিন স্পেশালিস্ট কাউকে দেখাতে হবে, লোকাল কিছু অয়েন্টমেন্ট ও স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন ব্যবহার করা লাগতে পারে যা তিনি প্রেসক্রাইব করবেন আপনার এই ছোট গোল টাকের অবস্থা বুঝে।
লিখেছেন
ডা. ফারজানা রশীদ
প্রভাষক, ফার্মাকোলজি বিভাগ
সাপ্পোরো ডেন্টাল কলেজ এন্ড জেনারেল হসপিটাল, ঢাকা
(ছবি-ইন্টারনেট)