আজকাল বাজারে বিশেষ করে নামিদামি ব্র্যান্ডের লেভেলের নিচে নিম্নমানের উপাদান দিয়ে তৈরি নকল কসমেটিক প্রোডাক্টের ছড়াছড়ি। এমনিতেই কসমেটিক প্রোডাক্টগুলোতে কেমিক্যাল থাকে তার উপর যদি নিম্নমানের হয় তবে প্রতিনিয়ত ব্যবহারে স্কিন ডিজিস, অ্যালার্জি এমন কি স্কিন ক্যান্সারের হবার সম্ভবনা কয়েকগুন বেড়ে যায়।তবে নকল প্রসাধনীর ভিড়ে আসলটি খুঁজে বের করা খুব যে কঠিন কিছু তা নয়। একটু বুদ্ধি ও সময় ব্যয় করলেই আপনি নিজেই আসল কোনটি তা বুঝতে পারবেন।আজকে আপনাদের এমন কিছু আইডিয়া দেয়ার চেষ্টা করব, যা আপনাদের নকল কসমেটিক প্রোডাক্ট চিনতে সাহায্য করবে।
– প্রথমে আপনাকে যা করতে হবে, যে প্রসাধনীটি আপনি কিনবেন, সেটির প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সাইট চেক করে পণ্যটির হলোগ্রামসহ প্যাকেজিং সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। প্রয়োজনে পণ্যটির ছবি তুলে সংগ্রহে রেখে দিন। দেশের বাইরের কিছু ওয়েব সাইট যেমন- Amazon, ebay তে দেখতে পারেন। মার্কেটে গিয়ে কেনার ক্ষেত্রে আপনি ছবিটির সাথে প্রসাধনীটির হলোগ্রামসহ প্যাকেজিং ও এটি কি কি উপাদানে তৈরি তা মিলিয়ে নিন। সব মিলে গেলে তবেই সেটি কিনুন। সন্দেহ হলে আরও ২/৩ দোকান যাচাই বাছাই করুন।
– আর অনলাইন সাইটে যেহেতু কেনার আগে হাতে নিয়ে দেখার সুযোগ থাকেনা সেক্ষেত্রে যেখান থেকে কিনবেন তাদের কাছে প্রসাধনীটির আসল ছবি (যে পণ্যটি তারা আপানাকে দেবে) বিভিন্ন দিক থেকে তুলে প্রেরণ করতে বলুন। ছবি গুলোর সাথে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের ছবির মিল থাকলে তবেই অর্ডার করুন।
– প্যাকেজিংটা বিচক্ষণতার সাথে পর্যবেক্ষণ করুন। খুব ছোট ছোট ব্যাপারগুলো খেয়াল করুন। ফন্ট, সাইজ এবং প্যাকিজিং কালারটাও মিলিয়ে নিন। এমন কি নকল পণ্যগুলোর ওজনেও ঘাপলা থাকে।
– প্রোডাক্টের গায়ে লিখা সিরিয়াল নাম্বার, বার কোড এবং ম্যানুফ্যাকচারিং ইনফর্মেশনগুলো ভালো করে দেখে নিন। নকল প্রোডাক্ট হয়ে থাকলে বার কোডের প্রথম তিনটি ডিজিট উৎপাদনকারী দেশের কোডের সাথে ম্যাচ করবে না। বেশির ভাগ সময় ফেইক কসমেটিকসের গায়ে সিরিয়াল নাম্বার থাকে না। যদি সিরিয়াল নাম্বার পেয়েও জান তাহলে আবার চোখ বন্ধ করে কিনে ফেলবেন না যেন! প্রোডাক্টের গায়ে থাকা সেরিয়াল নাম্বরের সাথে প্যাকেটের সিরিয়াল নাম্বার মিলিয়ে নিন। মিলে গেলে তবেই কিনুন।
– জেনুইন হাই এন্ড কসমেটিক ব্র্যান্ডগুলো প্রোডাক্ট সম্পর্কিত তথ্যগুলো কয়েকটা ভাষায় দিয়ে থাকে। আর একটি ব্যাপার লক্ষ্য রাখবেন, প্রোডাক্টে ব্যবহৃত উপাদানগুলোর উল্লেখ রয়েছে কিনা।নকল পণ্য উৎপাদনকারীরা অনেক সময় এমন সব কালারের লিপস্টিক, আইশ্যাডো, ব্ল্যাশ থেকে শুরু করে ব্রাশ, ব্লেন্ডারগুলো এমন সব কালারের তৈরি করে যা রিয়েল ব্র্যান্ডগুলো করেনি। কাজেই কসমেটিক কেনার সময় রিয়েল প্রোডাক্টের কালারের সাথে মিলিয়ে দিন। একজ্যাক্ট কালার মিললে তবেই কিনুন। সেক্ষেত্রে কসমেটিক ব্র্যান্ডের অফিশিয়াল পেজে প্রোডাক্টটি দেখে নিন।
– অথেনটিক কসমেটিকগুলোতে বিশেষ করে যেগুলো ম্যাট সেগুলোতে কোনরকম অহেতুক স্ট্রং স্মেল এবং স্পার্কেল থাকে না। অন্যদিকে ক্রিমি কসমেটিকগুলোর উপাদানগুলো আলাদা হয়ে যায় না। ফেক লিপস্টিক গুলো দেখতে কম অ্যাট্রাকটিভ এবং কোন না কোন খুত থাকবে।
– যদি মাশকারার কথা বলি তাহলে জেনুইন ডিজাইনার মাশকারা খুব হালকা সুগন্ধের হয়ে থাকে। যেকোনো কসমেটিক প্রোডাক্ট যদি বাজে গন্ধ অথবা হেভিলি পারফিউমড হয়ে থাকে তবে বুঝে নিতে হবে যে সেটা ফেইক।
– নকল প্রোডাক্টের শেপেও বেশিরভাগ সময় সমস্যা থাকে। কাজেই প্রোডাক্ট কিনবার আগে সাইজ, শেপ দেখে কিনুন। ডি-ফর্মড প্রোডাক্ট এড়িয়ে চলুন।
– জেনুইন লিপস্টিকগুলো স্মুদলি এবং ইভেনলি ঠোঁটে লেগে যায়। ভালো মানের মাশকারাগুলো দেয়ার পর গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে পরে না। প্রোডাক্ট কেনার আগে কন্সিস্টেন্সি (ঘনত্ব) দেখে কিনুন। খুব বেশি ঘন বা পাতলা কিনা দেখুন। স্কিনের সাথে ভালোভাবে মিক্স না হলে প্রোডাক্ট কেনা থেকে বিরত থাকুন।
– বিভিন্ন কসমেটিকসের দাম নিয়েও থাকে বিভ্রান্তি। কোন কসমেটিকস কেউ কেউ ৫০০ টাকায় আবার অন্যান্যরা ১০০০-১৫০০ টাকায় বিক্রয় করছে। দামের প্রায় এই তিনগুন ব্যবধান আসলেই বিভ্রান্তিকর। সেক্ষেত্রে প্রসাধনীটির প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারিত দামটিও তাদের ওয়েব সাইট চেক করে ধারনা নিতে পারেন।
সুলভ মূল্যের অফার দেখে নকল প্রসাধনী কিনে ত্বকের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি না করে একটু সময় ও বুদ্ধি খাটালেই আপনি আসল প্রসাধনীটি কিনে লাভবান হতে পারেন।
ধন্যবাদ
এডমিন ABEx _Bio